চাঁদা না দেওয়ায় ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় শরীয়তপুরের একাধিক বাস ভাঙচুর ও শ্রমিকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে সাবেক এক যুবদল নেতা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শরীয়তপুর থেকে যাত্রাবাড়ীতে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।
শনিবার (১২ জুন) সকাল ১০টায় শরীয়তপুরে জেলা বাস মালিক সমিতির অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন বাস মালিক-শ্রমিকরা।
চাঁদা না দেয়ায় শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহনের ৩টি যাত্রীবাহী বাস ভাংচুর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া যাত্রাবাড়ি বাস-স্ট্যান্ডে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের কোন বাস ভিড়তে দেয়া হচ্ছে না। ফলে শরীয়তপুরের যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এদিকে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে যাত্রাবাড়ি এলাকার ফাহিম নামে এক যুবদল নেতার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুরের আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির তার ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, ‘যাত্রাবাড়িতে যুবদলের এক নেতা শরীয়তপুরের সকল বাস থেকে চাঁদা চেয়েছে। এককালীন ৫ কোটি, নয়তো প্রতিমাসে ১০ লাখ। দু’দিন ধরে কোন বাস যাত্রাবাড়ি যেতে পারছে না, সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে আসতেও পারছে না। চরম ভোগান্তিতে শরীয়তপুরের মানুষেরা। সরকার প্রশাসনের চেয়ে কি চাঁদাবাজরা বেশি শক্তিশালী? সরকারের চেয়েও শক্তিশালী হতে পারে জনতার চেয়ে কিন্তু শক্তিশালী নয়; ঢাকাস্থ শরীয়তপুরের সকল মানুষ যাত্রাবাড়ি জড়ো হলে এবং শরীয়তপুরের সকল মানুষ যাত্রাবাড়ি আসলে কেমন হবে? আর শরীয়তপুরের মানুষ কিন্তু খালি হাতে জড়ো হবে না। এমনিই বললাম পরিস্থিতি যদি ঐদিকেই নিয়ে যায় তাইলে কেউ শান্তিতে থাকতে পারবে না।’
জাহিদ হাসান নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে ওই চাঁদাবাজ ব্যক্তির ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এই সেই চাঁদাবাজ যুবদলনেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম। যাত্রাবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে শরীয়তপুরের কোনো গাড়ি নেই। হাজার হাজার যাত্রী চরম ভোগান্তিতে। গ্যাপ ও চাঁদা দাবি: মাসিক ১০ লাখ টাকা! মালিক-শ্রমিকেরা ক্ষোভে ফুঁসছে। যাত্রাবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে শরীয়তপুরের কোনো গাড়ি নেই। হাজার হাজার যাত্রী চরম ভোগান্তিতে। গত দুইদিন ধরে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস লিমিটেড যাত্রাবাড়ি থেকে যাত্রী উঠানো বা নামাতে পারছে না। ফলে শরীয়তপুরগামী বাস চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এতে হাজার হাজার যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছেন গাড়ির অপেক্ষায়, ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। গাড়ি চলাচল বন্ধের পেছনে দায়ী ব্যক্তি হিসেবে উঠে আসছে এক বিএনপি পরিচয়ধারী সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ ফাহিম-এর নাম। অভিযোগ রয়েছে, সে বর্তমানে শরীয়তপুর বিএনপির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার সাথে গোপন বৈঠকে ব্যস্ত। উদ্দেশ্য গাড়ি চলাচলে বাধা দিয়ে মালিকদের কাছ থেকে “গ্যাপ” ও মাসিক ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায়।’
জেলার বাস মালিক সমিতি সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে শরীয়তপুর থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় নিয়মিত যাত্রীপরিবহন করে আসছে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহনের দুই শতাধিক বাস। এ রুট ধরে প্রতিনিয়ত ঢাকা ও শরীয়তপুরে যাতায়াত করে অন্তত ৩০ হাজার যাত্রী। সম্প্রতি এরুটে চলা পরিবহনগুলোর মালিকদের কাছে ৫ কোটি চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিমের বিরুদ্ধে। এদিকে তাকে চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর ও বেশ কয়েকজন শ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর থেকেই বাস শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে চাঁদাবাজি বন্ধ ও অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহবুব আলম তালুকদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, এটা ঢাকার বিষয়, তাই আমরা কিছু জানি না।