August 18, 2025, 11:10 am

রাজবাড়ীতে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে দুই শিক্ষকের রাজকীয় বিদায়

ডেস্ক

Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

twitter sharing button
sharethis sharing button

 

রাজবাড়ী: বিদায় শব্দটি যতটা বেদনার, ততটাই কখনো কখনো তা হয়ে ওঠে স্মরণীয়, আবেগঘন এবং ঐতিহাসিক। রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ঘিরে রোববার (১৭ আগস্ট) এমনই এক ব্যতিক্রমী বিদায়ের আয়োজন দেখা গেল। বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. মোশারফ হোসেন ও দিবা শিফট ইনচার্জ প্রাণ কৃষ্ণ সাহাকে শেষ কর্মদিবসে রাজকীয়ভাবে বিদায় জানানো হয় সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে। এ দৃশ্য ছুঁয়ে যায় সবার হৃদয়।

 

বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবর্ধনা শেষে প্রিয় দুই শিক্ষককে ঘোড়ার গাড়িতে তুলে বের করা হয় একটি পদযাত্রা। শহরের কোর্ট চত্বর প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় বিদ্যালয়ে এসে শেষ হয় পদযাত্রা। এসময় ফুল বর্ষণ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতি জানায় ভালোবাসা ও সম্মান। ঘোড়ার গাড়ির পেছনে হেঁটে অংশ নেন শত শত শিক্ষার্থী, যেন এটি রূপ নেয় এক আবেগঘন শ্রদ্ধা র‌্যালিতে।

শেষ কর্মদিবসে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের আকাশ যেন ভিজে উঠেছিল আবেগে। সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে ভর করে দুই শিক্ষক যখন স্কুল প্রাঙ্গণ ছাড়ছিলেন, তখন সবার চোখে জল, মনে গর্ব—এ যেন রাজকীয় বিদায়।

 

শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষকই সমাজের প্রকৃত নির্মাতা। তারা শুধু পড়াশোনায় নয়, জীবনের দিশা দিতেও বাবার মতো পথপ্রদর্শক ছিলেন। তাই বিদায়ের দিনে তাদের স্মরণীয়ভাবে সম্মান জানানো আমাদের দায়িত্ব।

 

বিদায়ী শিক্ষক মো. মোশারফ হোসেন, যিনি প্রায় ২৭ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে সেবা দিয়েছেন, আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন—‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা যেভাবে দেওয়া উচিত আজ আমি সেভাবেই পেয়েছি। বিদায় কষ্ট হলেও এই ব্যতিক্রমী আয়োজনে অনেক ভালো লাগছে। জীবনের বাকি অংশের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্লাস নিয়ে যে আনন্দ, জ্ঞানের যে বিস্তার ঘটানো সেটা থেকে বঞ্চিত হব। ছাত্ররা আমাদের সম্পদ, ওরা আমাদের সন্তান তুল্য। ওদের যে স্নেহ ভালবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিলাম, সেই স্নেহ ভালবাসা এত কাছ থেকে তো আর দিতে পারব না। আমি ২৭ বছর এই স্কুলের সঙ্গে রয়েছি। এই স্কুলের প্রতিটা ইট, প্রতিটা কাঠ, গাছপালার সঙ্গে একটি সম্পর্ক রয়েছে। এই ২৭ বছরের সম্পর্ক আজ বিচ্ছিন্ন হতে চলেছে। আজ খুব মনোবেদনায় আছি। ১২ টায় স্কুলে আসতে হবে, এসে দিবা শাখায় ক্লাস নিতে হবে। সেই যে একটা প্রেরণা ছিল, সেই প্রেরণা এখন আর আমাকে জাগাবে না। এটি হচ্ছে একটি দুঃখের জায়গা। ওদের মুখটা প্রতিদিন দেখতাম, ওদের সাথে কথা হতো, ভাব বিনিময় হতো, গল্প হতো বিভিন্ন পাঠ্য বিষয় নিয়ে কথা হতো , বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা হতো, ওদের মুখ থেকে কিছু কথা শুনতাম, আমরা কিছু বলতাম এই যে পারস্পরিক মতবিনিময় সেটার সুযোগ তো এখন আর থাকল না।’

 

অন্য বিদায়ী শিক্ষক প্রাণ কৃষ্ণ সাহা, যিনি ৩০ বছর ৯ মাস ১৬ দিন ধরে শিক্ষকতা করেছেন, স্মৃতিময় ভঙ্গিতে তিনি বলেন—‘শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। আমি ৩০ বছর ৯ মাস ১৬ দিন এই বিদ্যালয়ে চাকুরি করেছি। এই জায়গাটিতে সব শিক্ষক যেমন সফলতা পায় না। তেমনি আবার সব শিক্ষক ব্যর্থতা হয় তাও না। আমি বলতে চাই আগামী দিনে যে শিক্ষক এই প্রতিষ্ঠানে আসবে, তাদেরকে এই বিদ্যালয়কে ভালোবাসতে হবে। ছাত্রদেরকে ভালোবাসবেন, এই ক্যাম্পাসকে মুখরিত করে রাখবেন, তাহলে বিদ্যালয়ের মর্যাদা ঠিক থাকবে। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যারা বেরিয়েছে তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত।’

 

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মোফাজ্জেল হোসেন বলেন—‘বিদায় বড় কষ্টের, তবুও মানতে হবে। আমাকে এভাবে একদিন বিদায় নিতে হবে। একজন শিক্ষকের বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে তাকে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে রাজকীয়ভাবে তাদের বিদায় জানানো হয়েছে। আমার শিক্ষকরা অনেক ভালো মনের মানুষ। তারা আমার এ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনে সব সময় সহযোগিতা করেছেন। সেজন্য তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমাদের সাথেই থাকুন