নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থা বর্তমানে চরম নাজুক। গ্যাস সংকটের কারণে কেন্দ্রের সাতটি ইউনিটের একটিও বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নেই। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রটির প্রধান প্রকৌশলী মো. এনামুল হক।
তিনি জানান, “গত দুই বছর ধরেই আমাদের গ্যাসের সংকট চলছে। কিন্তু ঈদুল আজহার পর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। গ্যাস না থাকায় ৪, ৫ ও ৭ নম্বর ইউনিট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ে বিকল্পভাবে গ্যাস চেয়ে আবেদন করেছি।”
ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪ নম্বর ইউনিটে রয়েছে ৩৬০ মেগাওয়াট, ৫ নম্বরে ২১০ মেগাওয়াট এবং ৭ নম্বরে ৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা। এককভাবে এই তিন ইউনিটই উৎপাদন করতে পারে প্রায় ৯৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, যা জাতীয় গ্রিডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
প্রধান প্রকৌশলী আরও জানান, ৩ নম্বর ইউনিটে রোটারের ব্লেডে সমস্যার কারণে আগে থেকেই উৎপাদন বন্ধ ছিল। মেরামতের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গ্যাস পেলেই এই ইউনিটও চালু করা সম্ভব।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরেই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে ৬ নম্বর ইউনিট, যেখানে ২০১০ সালের জুন মাসে আগুন লাগায় টারবাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই থেকে এটি পুরোপুরি অচল।
ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রাচীনতম ১ ও ২ নম্বর ইউনিটও এখন ইতিহাসের অংশ হতে চলেছে। ১৯৭৪ ও ১৯৭৬ সালে উৎপাদনে আসা এই দুটি ইউনিট বারবার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। সূত্র জানায়, এই দুটি ইউনিট ভেঙে নতুন ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এই মুহূর্তে জাতীয় গ্রিডে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কোনো বিদ্যুৎ যোগ হচ্ছে না। স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট বেড়েছে বলেও জানান পলাশ উপজেলার বাসিন্দারা।
দেশের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের এমন অচলাবস্থা শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য নয়, জাতীয় পর্যায়েও এক বড় ধাক্কা। দ্রুত বিকল্প গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।