দেশ শুধু পথ হারাচ্ছে না, অতল গহ্বরে চলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ ও কলাম লেখক গোলাম মাওলা রনি। সম্প্রতি তিনি বেসরকারি টেলিভিশনের এক টক শোতে উপস্থিত হয়ে এ কথা বলেছেন।
তিনি ওই টক শোর উপস্থাপকের প্রশ্ন ধরে বলেন, ‘আলটিমেটলি বাংলাদেশ পথ হারিয়ে ফেলেছে। এর কারণ হলো—গণতন্ত্র-প্রগতির যে চিরাচরিত পথ ছিল, সেই পথ থেকে এখন যেটা হয়ে গেছে, সেটা হলো একে অপরকে ঠকানোর প্রবণতা।
প্রত্যেকটা পক্ষই চাচ্ছে একে অপরকে ঠকানোর জন্য।দুই নম্বর হলো—প্রতিপক্ষকে ভয় পাচ্ছে। সরকার যেমন রাজনৈতিক দলকে ভয় পাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরকে ভয় পাচ্ছে। ভীষণ রকম ভয় পাচ্ছে।
এই ভয় থেকে কিন্তু দেখবেন যেসব আতঙ্ক শুরু হয়ে যায়। আতঙ্ক থেকে ঘৃণা, ঘৃণা থেকে আঘাত এবং সে আঘাত থেকে প্রতিঘাত এবং এসব কাজ করতে গিয়ে মানুষ খুব অধৈর্য হয়ে পড়ে। ভীষণ রকম যে আমার খুব দ্রুত রেজাল্ট দরকার। তাড়াহুড়া করতে থাকে।
এখন যারা ক্ষমতায় আছেন তারা যেমন এখানে ক্ষমতায় থাকার জন্য খুব তাড়াহুড়া করছেন। আর যারা ক্ষমতায় যাবেন তারাও ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য খুব তাড়াহুড়া করছেন। আর যখন মানুষ তাড়াহুড়ার মধ্যে থাকে তখন সেখানে অনেক অঘটন ঘটে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন আপনি একজনকে খুব মারতে চান, খুব দ্রুত মারতে চান। তো অন্য সময় যদি আপনার ধৈর্য থাকে তাহলে আপনি নিঃস্বরূপভাবে মারবেন না।
কিন্তু আপনি যদি খুব তাড়াহুড়া করতে চান তাহলে এই যে পাথর দিয়ে আদিম কায়দায় মারা হলো ঠিক এইভাবে মারতে হয়। পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক থাকে তখন একজন আরেকজনের সঙ্গে যথেষ্ট সময় থেকে প্রতিযোগিতা করে। তখন প্রতিযোগিতার ভাষা, আচরণ, কৃষ্টি এবং কালচার এক রকম হয়। কিন্তু এখন যেভাবে হচ্ছে প্রতিযোগিতাগুলো অসম প্রতিযোগিতা হচ্ছে এবং এখানে আপনি দেখেন এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সীমান্তে গুজব, পাহাড়ি অঞ্চলে গুজব এবং এই ঢাকা শহরেও গুজব আছে।’
গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘গুজব কিন্তু মিথ্যার চেয়েও ভয়ংকর। এর চেয়ে ভয়ংকর কিছু আর নেই। মানে ভয় দেখানো। গুজব দেখেই আপনি সর্বনাশ ঘটাতে পারেন এবং যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে তখন একে অপরের প্রতি সম্মান জানানো হয়। এখন আমাদের যে সামাজিক মাধ্যম, সে সামাজিক মাধ্যম কিন্তু সমাজের একটা দর্পণ। এখন YouTube বলেন বা Facebook বলেন মানুষের রুচি-আভিজাত্য সব কিছু ওখানে ফুটে ওঠে। এই রাজনীতি নিয়ে সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে সেখানে যে অশ্লীলতা, অশ্রাব্যতা, অভব্যতা অপসংস্কৃতি, হিংসা এবং ক্রোধ যা কিছু ছড়িয়ে পড়ছে, এতে আপনি যেটা বললেন যে—দেশ শুধু পথ হারাচ্ছে না খাদের কিনারে। এমন অতল গহ্বরে চলে যাচ্ছে, আলকাতার গর্তের মধ্যে যদি একটা মানুষ পড়ে তখন তাকে উঠানোর পরে আর মানুষ চেনা যায় না। সে বেঁচে আছে কি না, আলকাতরা যদি তার নাকের ভেতরে, মুখের ভেতরে ঢুকে যায় তখন আপনি তাকে চিনতে পারবেন না।’