এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা না হলেও ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ-আংশিক সদর) আসনে এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে।
কিন্তু অভ্যন্তরীণ বিবাদ ও গ্রুপিংয়ের কারণে বিএনপি এখনো দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে পারেনি। আর এ সুযোগটি কাজে লাগাতে মরিয়া জামায়াতে ইসলামী। এ আসনটি নিজেদের দখলে নিতে দলের নেতাকর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও ঝিনাইদহের চারটি ইউনিয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসন। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে প্রচার-প্রচারণায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হামিদুল ইসলাম হামিদ, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি শহীদুজ্জামান বেল্টুর স্ত্রী মুরশিদা জামান।
জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী উপজেলা নায়েবে আমির মাওলানা আবু তালিব, গণঅধিকার পরিষদের ঝিনাইদহ জেলা কমিটির সভাপতি প্রভাষক সাখাওয়াত হোসেন এ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি আহম্মদ আব্দুল জলিল, জামায়াতের একক প্রার্থী ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিয়মিত যোগ দিয়ে ভোটার ও সাধারণ মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের নানা চেষ্টা করছেন। তারা গণসংযোগ ও দলীয় কর্মসূচির বাইরে বিভিন্ন গ্রাম, হাটবাজারে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন।
বর্তমানে কালীগঞ্জে বিএনপিতে তিনটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে এবং গ্রুপিংয়ের কারণে দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর কালীগঞ্জে বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নামধারী নেতাকর্মীরা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছেন। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ৫ আগস্টের পর ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির পাঁচ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের পর এখানকার রাজনৈতিক চিত্র পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগবিহীন মাঠে এবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের লড়াইয়ে মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠতে চান বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় নেতাকর্মীরা নানা মত ও পথে বিভক্ত। কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মাহবুবার রহমান আমার দেশকে বলেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন, আশা করি এবারও তিনি পাবেন। অপরদিকে স্থানীয় বিএনপির অনেকের অভিযোগ রয়েছে, দলের দায়িত্বশীল পদে থাকা একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী নিজের গ্রুপে লোকজন বাড়াতে বিএনপির নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করছেন। তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় পদে থাকা লোকজনকে নিয়ে সভা-সমাবেশ করেছেন বলেও বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের অভিযোগ।
অতি সম্প্রতি দলের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কালীগঞ্জ জামাল ইউনিয়নের তালিয়ান গ্রামে বিএনপির ইউনুস আলী ও মহব্বত আলী নামে আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা, দিঘিরপাড়া গ্রামের চাচাতো দুই ভাই মোশারফ হোসেন ও নাহিদ ইসলাম এবং মালিয়াট গ্রামের নায়েব আলীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা বিএনপিকে ভাবিয়ে তুলছে। ইউনুস আলী, মহব্বত আলী হত্যার ঘটনায় ৫৮ জনের নামে মামলা ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডাক্তার নুরুল ইসলাম, সদস্য আশরাফ হোসেন মহুরিকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একই দিনে কালীগঞ্জ থানা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়।
বিএনপির প্রকাশ্য বিরোধের সুযোগে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা আবু তালিব দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা জোরেশোরে শুরু করেছেন।
কালীগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ আমার দেশকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন হামলা-মামলার শিকার হয়ে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দিবে’।
এ আসনে চারবারের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান বেল্টুর স্ত্রী মুরশিদা জামান বলেন, তার স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য আসনটিকে ধানের শীষের ঘাঁটিতে পরিণত করেছিলেন। তার অবর্তমানে তিনি মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছেন ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে।
জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা আবু তালিব বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে অনেক মামলার শিকার হয়েছি। আমি নির্বাচিত হলে জনগণের পাশে থেকে কাজ করব।
এদিকে বিএনপি তিন ভাগে বিভক্ত হওয়ায় জামায়াতে ইসলামী সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আসনটি লুফে নিতে চায়। অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের গণসংযোগের তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর বিএনপির পাঁচ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। অবশেষে কালীগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করায় এখানকার রাজনীতি চলছে নেতৃত্বহীন। দল বিভক্ত হওয়ার কারণে ভেঙে পড়েছে সংগঠনের চেইন অব কমান্ড। যে যার মতো বলয় তৈরি করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। এত নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ, হিংসা আর বিদ্বেষ। অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) প্রার্থী এখনো ঘোষণা না হওয়ায় নির্বাচনি মাঠে নেই দলটির কোনো কার্যক্রম।