September 4, 2025, 7:44 am

আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ৬০ গাড়ি কেনা হচ্ছে

Reporter Name

আগামী সরকারের জন্য ৬০টি বিলাসবহুল গাড়ি কেনার প্রস্তাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি

ব্যয় হবে প্রায় ৪৪৫ কোটি টাকা

আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ৬০টি মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স (২৪২৭ সিসি) জিপ গাড়ি কেনার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিটি গাড়ির দাম ধরা হয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা। শুধু এই গাড়িগুলো কিনতেই ব্যয় হবে ১০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

একই সঙ্গে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালনের জন্য আরও ২২০টি গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য ১৯৫টি জিপ এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জন্য ২৫টি মাইক্রোবাস থাকবে। সব মিলিয়ে ২৮০টি গাড়ি কিনতে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৪৪৫ কোটি টাকা।


ব্যয়সঙ্কোচনের নির্দেশনা উপেক্ষিত

চলতি অর্থবছরে যানবাহন কেনার ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচনের নির্দেশনা দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। ৮ জুলাই জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছিল— পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় নতুন কোনো যানবাহন কেনা যাবে না। তবে ১০ বছরের বেশি পুরোনো ও অচল গাড়ি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অনুমোদন সাপেক্ষে কেনা সম্ভব। কিন্তু মন্ত্রীদের জন্য বিদ্যমান গাড়িগুলো ৯ বছরের পুরোনো হওয়ায় এ ক্ষেত্রেও পরিপত্রের শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে।


পূর্বের গাড়ি ও বর্তমান সিদ্ধান্ত

২০১৫-১৬ অর্থবছরে মন্ত্রীদের জন্য টয়োটা ক্যামরি (২৫০০ সিসি হাইব্রিড) এবং প্রতিমন্ত্রীদের জন্য মিতসুবিশি ল্যান্সার ইএক্স (১৬০০ সিসি) কেনা হয়েছিল। তখন ক্যামরির দাম ছিল ৮৫–৯০ লাখ টাকা এবং ল্যান্সারের দাম ২০–২৫ লাখ টাকা। বর্তমানে যেসব গাড়ি ব্যবহার হচ্ছে সেগুলো নিয়মিত মেরামত করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যুক্তি দিয়েছে।

কিন্তু এবার মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর জন্য একই ধরণের জিপ গাড়ি কেনা হচ্ছে, যার দাম প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি—প্রতিটি ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।


প্রশ্ন উঠছে ম্যান্ডেট নিয়ে

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন—

“পরবর্তী সরকার বা মন্ত্রীরা কী গাড়ি ব্যবহার করবেন, তার সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকারের নয়। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বও নয়। ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপ উপেক্ষা করার পাশাপাশি, এই সিদ্ধান্ত তাদের ‘ম্যান্ডেটের’ বাইরে।”

তিনি অনতিবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন।


আইনগত জটিলতা

১৯৭৩ সালের ‘দি মিনিস্টারস, মিনিস্টারস অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমিউনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) আইন অনুযায়ী, মন্ত্রীরা সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য একটি কার (সেডান গাড়ি) পাবেন। ঢাকার বাইরে সফরে গেলে অতিরিক্ত একটি জিপ ব্যবহারের অনুমতি আছে। বর্তমান সিদ্ধান্তে শুধু জিপ কেনার কথা বলা হয়েছে, যা বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আইন সংশোধন ছাড়া এভাবে জিপ কেনা যায় না।


নির্বাচনী গাড়ি কেনার অনুমোদন

নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনের জন্য ১৯৫টি পাজেরো জিপ এবং ২৫টি মাইক্রোবাস কেনার অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিটি জিপের দাম ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং প্রতিটি মাইক্রোবাসের দাম ৫২ লাখ টাকা। এ খাতে মোট ব্যয় হবে ৩৪৩ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে যানবাহন অধিদপ্তরের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩২৮ কোটি টাকা। কিন্তু ২৮০টি গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে ৪৪৫ কোটি টাকা। অতিরিক্ত ৯৬ কোটি টাকা অন্য খাত থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।


মন্ত্রিসভার আকার নিয়েও প্রশ্ন

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন মন্ত্রিসভার আকার সর্বোচ্চ ৩৫ জনের মধ্যে সীমিত রাখার সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে ২৩ মন্ত্রী ও ১২ প্রতিমন্ত্রী থাকবেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ৬০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে, যা ভবিষ্যৎ মন্ত্রিসভার আকার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমাদের সাথেই থাকুন